About Us

স্বামী বিবেকানন্দের ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল গঙ্গার পূর্বকূলে শ্রীমা সারদা দেবীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সন্ন্যাসিনীদের দ্বারা পরিচালিত স্বাধীন স্ত্রীমঠ। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ শ্রীশ্রীমায়ের জন্মশতবর্ষে (১৯৫৩-৫৪) স্বামীজীর পরিকল্পিত স্ত্রীমঠ প্রতিষ্ঠার সংকল্প করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশনের বিভিন্ন কেন্দ্রে আশ্রমজীবন যাপনেচ্ছু যেসব মহিলা কর্মী ছিলেন তাঁদের মধ্য থেকে সাতজনকে নির্বাচন করে তাঁরা ব্রহ্মচর্য দানের পরিকল্পনা করেন। তদনুযায়ী ১৯৫৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর শ্রীশ্রীমায়ের জন্মতিথিতে বেলুড় মঠের পুরনো ঠাকুরঘরে তৎকালীন সঙ্ঘাধ্যক্ষ পূজ্যপাদ স্বামী শঙ্করানন্দজী মহারাজ সাতজন ব্রতধারিণীকে ব্রহ্মচর্যদীক্ষা দান করেন। ইতোমধ্যে মেয়েদের মঠের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য তাঁরা কাশী থেকে সরলা দেবীকে আনিয়েছিলেন। শ্রীশ্রীমায়ের শিষ্যা ও অন্তরঙ্গ সেবিকা সরলা দেবী সাতাশ বছর যাবৎ কাশীধামে তপস্যা করছিলেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গাতীরে ‘সুরধুনী কাননে’ শ্রীসারদা মঠের প্রতিষ্ঠাকার্য সম্পন্ন করেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ। মন্দিরে শ্রীশ্রীঠাকুর-মা-স্বামীজীকে স্থাপন করেন স্বামী শঙ্করানন্দজী। ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি মায়ের জন্মতিথিতে বেলুড় মঠে তিনি পূর্বোক্ত সাতজন ব্রহ্মচারিণী এবং সরলা দেবীকে (স্বামী সারদানন্দ মহারাজের কাছে পূর্বেই কৌল সন্ন্যাসপ্রাপ্ত এবং ‘শ্রীভারতী’ নামপ্রাপ্ত) যথাবিধি বিরজা হোম করে সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষিত করেন। তাঁরা হলেন : প্রব্রাজিকা ভারতীপ্রাণা, প্রব্রাজিকা মোক্ষপ্রাণা, প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা, প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা, প্রব্রাজিকা বিদ্যাপ্রাণা, প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণা, প্রব্রাজিকা দয়াপ্রাণা এবং প্রব্রাজিকা মেধাপ্রাণা। এঁরাই শ্রীসারদা মঠের প্রথম আটজন সন্ন্যাসিনী। প্রব্রাজিকা মেধাপ্রাণা ব্যতীত অপর সাতজন সন্ন্যাসিনীকে ওই বছর (১৯৫৯) আগস্ট মাসে ট্রাস্টি করে তাঁদের ওপর স্বাধীন সারদা মঠের ভার অর্পণ করেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ। ১৯৬০ সালের ১৩ মে রামকৃষ্ণ সারদা মিশন রেজিস্ট্রিকৃত হলে তাঁরা গভর্নিং বডির সদস্য হন। শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমা ও স্বামীজীর পাবনী ভাবধারাকে অবলম্বন করে শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’ সেবাযজ্ঞে ব্রতী রয়েছে। সঙ্ঘের বাংলা মুখপত্র ‘নিবোধত’। শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের প্রথম সাধারণ সম্পাদিকা প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণামাতাজীর অনুপ্রেরণা ও পরিকল্পনাতেই নিবোধত-র জন্ম—১৯৮৭ সালের গুরুপূর্ণিমা তিথিতে। নামটি চয়ন করেছিলেন তিনিই, স্বামীজীর প্রিয় কঠোপনিষদের ‘উদ্ভিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত’ মন্ত্রাংশ থেকে। নিবোধত শব্দের অর্থ—অবগত হও বা জানো। স্বামীজী চেয়েছিলেন নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষ তার স্বরূপ অবগত হয়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই পূর্ণতাকে বিকশিত করুক। চেয়েছিলেন নতুন ভাবে ভাষায় আঙ্গিকে প্রাণবন্ত গদ্যে ও ছন্দে মানুষের কাছে ভারতবর্ষের সনাতন বাণীকে পৌঁছে দিতে। শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনাদর্শে যাবতীয় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ফুটে উঠুক মঠের পত্রপত্রিকায়—এই ছিল তাঁর ইচ্ছা ও নির্দেশ। স্বামীজীর নির্দেশিত সেই লক্ষ্যেই নিবোধত পত্রিকা প্রথমাবধি অগ্রগামী থেকেছে। এতে প্রকাশিত হয় ধর্ম, দর্শন, সমাজ, সাহিত্য, ইতিহাস, শিল্প, ভ্রমণ, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে সুনির্বাচিত প্রবন্ধ। ত্যাগব্রতী, বিদগ্ধ গবেষক, বুদ্ধিজীবী, কবি ও ভক্তদের রচনায় সমৃদ্ধ নিবোধত-র প্রতিটি সংখ্যা স্বকীয় বিশেষত্বে সমুজ্জ্বল।
× How can I help you?